মোঃ মুনাইম হোসেন,(জীবননগর) প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার বেশিরভাগ যুবকরা আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরানো সহ সাবলম্বী হয়েছেন। যুগ যুগ ধরে ফসলি জমির ওপর নির্ভর করেই চলতে হতো এখানকার সাধারণ মানুষদের । যার ফলে ঘরে ঘরে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব লেগেই থাকত। কর্মসংস্থানের অভাবে দলে দলে গ্রামের বেকার যুবকরা ঢাকামুখী হতো কিংবা বিদেশ পাড়ি জমাত। তবুও কাটত না এখনকার অর্থনৈতিক দুরাবস্থা। তবে জীবননগরের আগের দৃশ্যপট এখন পাল্টে গেছে। আধুনিক ও বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে যুবকরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছ উৎপাদন, আহরণ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ কাজে শত শত বেকার যুবকের সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের। পাশাপাশি মিটছে আমিষের চাহিদাও। উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের যুবক রাকিব হোসেন অর্থনৈতিক টানাপোড়নে কর্মসংস্থানের জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে প্রায় এক দশক প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করেছেন তিনি। ২০২৩ সালে বিদেশের কাজ ছেড়ে এলাকায় এসে থিতু হন। গ্রামে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেও ভাগ্যের চাকা পাল্টায়নি তার। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করেন বাণিজ্যকভাবে মাছ চাষ। বর্তমানে তার ২০০ শতাংশ জমির একটি বিশাল পুকুরসহ ছোট্ট বড় আরও ৬-৭টি পুকুর রয়েছে। এখানে মাছ চাষ করে প্রতিবছর কয়েক লাখ টাকা লাভ করছেন তিনি। রাকিব হোসেন আরো বলেন, ‘প্রবাসে যেই সময় ব্যয় করেছি দেশে তার চেয়ে কম সময় ব্যয় করেও এখন অধিক উপার্জন করছি। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে আমি লাভবান। দেশে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছি। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাছ চাষের খামারকে আরও সম্প্রসারণ করা। শুধু সরকারি চাকরি আর বিদেশগামী না হয়ে দেশের প্রতিটি এলাকার যুবকদের প্রত্যেকের নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করা উচিত।’ শুধু বিদেশফেরত যুবক রাকিব হোসেন একাই নয়, তার মতো রায়পুর গ্রামের সিহাব, শান্ত মিয়া, সরিফুল ইসলাম, আহসান হাবীব সহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। হাসাদাহ ইউনিয়নের মৎস্য চাষী সাগর ইসলাম বলেন, আমি প্রথমে একটি পুকুর লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করি। পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পরের বছর ৭টি পুকুর লিজ নেই। আমি পুকুরে সাধারণত রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, সিলভার কাপ সহ অন্যান্য মাছ চাষ করি। আমি এ বছর সকল খরচ বাদ দিয়ে ১২ লক্ষ টাকার মত লাভ করি। জীবননগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জীবননগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের পুকুরের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। সেখানকার আবহাওয়া ও মাটি মাছ চাষ উপযোগী, যেকারণে সেখানে মাছের উৎপাদন হয় ভালো। আমরা চাষিদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সকল ধরনের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছি।
Leave a Reply