1. admin@agamirdorpon.com : admin :
  2. agamirdarpon@gmail.com : News admin :
  3. razzakmaheshpur@gmail.com : razzakmaheshpur :
সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে নীল বিদ্রোহের সাক্ষী খালিশপুর নীলকুঠি
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে নীল বিদ্রোহের সাক্ষী খালিশপুর নীলকুঠি

  • প্রকাশিত সময় : বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫
  • ৬৬ Time View

 মশিয়ার রহমান টিংকু, মহেশপুরঃ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের তীরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক খালিশপুর নীলকুঠি। একদা নীলকরদের অত্যাচারের কেন্দ্রবিন্দু ও পরবর্তীকালে নীল বিদ্রোহের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এই কুঠিবাড়িটি আজ যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব হারাতে বসেছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উনিশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি মি. ডেভরেল কপোতাক্ষের তীরে প্রায় ১৪ বিঘা জমির ওপর এই কুঠিবাড়িটি স্থাপন করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলে নীলচাষের প্রসার ঘটানো এবং চাষিদের ওপর কড়া নজরদারি রাখা। স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে এই কুঠিবাড়ির লোমহর্ষক ইতিহাস। কথিত আছে, ভবনের নিচতলাটি ব্যবহার করা হতো অবাধ্য নীলচাষি ও শ্রমিকদের ওপর কঠোর শাসন ও নির্যাতনের জন্য। নীলকরদের সেই অমানবিক অত্যাচারই একসময় উস্কে দেয় ঐতিহাসিক নীল বিদ্রোহকে, যা ছিল ব্রিটিশবিরোধী প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ব্যবহারের বিবর্তন নীল বিদ্রোহ এবং অন্যান্য কারণে ১৮৫৮ সালের পর ইংরেজরা এই কুঠিবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালে স্থানীয় জমিদাররা এটিকে কাচারি বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করেন।১৯৫৬-৫৭ এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে এটি সার্কেল অফিস (সিও অফিস) এবং ১৯৮৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী দোতলা এই ভবনটির স্থাপত্যশৈলী অনন্য। এতে মোট ১২টি কক্ষ রয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, নিচতলার কক্ষগুলো নির্যাতন এবং ওপরের তলার কক্ষগুলো কর্মকর্তাদের বিশ্রাম বা পুলিশি কাজে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন চুন, সুরকি এবং পাকা ইট দিয়ে নির্মিত ভবনটির দেয়াল প্রায় ২০ ইঞ্চি পুরু। এর দক্ষিণমুখী প্রশস্ত বারান্দা এবং কুঠিবাড়ি থেকে সরাসরি নদীতে নেমে যাওয়া সিঁড়িটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ধারণা করা হয়, গোসল ও বিভিন্ন উৎসবের সুবিধার্থে এই সিঁড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। কুঠিবাড়ির আঙিনায় রয়েছে শতবর্ষী আম্রকানন এবং একসময় এর চত্বরে মূল অবকাঠামোর অংশ হিসেবে আদিবাসীদের জন্যও ঘর ও বিভিন্ন কাঠামো ছিল। গুরুত্ব ও স্থানীয়দের দাবি কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত হওয়ায় এই কুঠি থেকে ব্রিটিশ আমলে জাহাজ, স্টিমার ও নৌকার মাধ্যমে যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন অত্যন্ত সহজ ছিল। স্থানীয়দের মতে, এই ভবনটি কেবল একটি পুরনো দালান নয়, এটি নীলচাষিদের ওপর চালানো নির্যাতন এবং তাদের সংগ্রামের এক জীবন্ত স্মৃতিচিহ্ন। তারা মনে করেন, অবিলম্বে এটি সংরক্ষণ করা না হলে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের দাবি, ভবনটি সংস্কার করে একটি জাদুঘর, শিক্ষা কেন্দ্র বা দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হলে এটি পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে। শেষ কথা খালিশপুর নীলকুঠি শুধুই একটি স্থাপনা নয়, এটি শোষণ, বঞ্চনা আর প্রতিবাদের এক মূর্ত প্রতীক। এর ঐতিহাসিক মূল্য অনুধাবন করে সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ এবং একটি ইকোপার্ক প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
  • © All rights reserved © 2019 agamirdorpon.com
Design & Developed By BD IT HOST