ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সাদ্দাম হোসেন (৩২) নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ উঠেছে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত সাদ্দাম হোসেনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মহেশপুর গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে এবং চ্যানেল২৪.কম-এর জেলা প্রতিনিধি। অভিযুক্ত বিপ্লব হোসেন উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে এবং ফিরোজ আহমেদের বাড়িও একই গ্রামে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ বাজার দিয়ে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। এ সময় বাজারে নিজের ওষুধের দোকান থেকে বেরিয়ে এসে বিপ্লব হোসেন তার সঙ্গে তর্কে জড়ান। বিল্পবের চাচা ফিরোজ আহমেদ ছুটে এসে সাদ্দামের গায়ে আঘাত করেন। সাদ্দাম প্রতিহত করার চেষ্টা করলে বিপ্লব ও ফিরোজ দুজনে মিলে তাকে মারধর করেন। সাদ্দামের পরিচিতরা ছুটে এলে ওই দুজন সরে যান। পরিচিতরা সাদ্দামকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে আহত সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০২২ সালের প্রথম দিকে আমার ফেসবুকে কোনো ছবি আপলোড করলে কয়েকটি আইডি থেকে বিরূপ মন্তব্য করা হতো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমি সদর থানায় ওই আইডির বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করি। পরবর্তীতে চলতি বছরের জুলাই মাসে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ইউনিট বিপ্লব হোসেনকে শনাক্ত করে ধরে নিয়ে আসে। তিনি আমার কাছে ঘটনার ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেন। আমার ধারণা এ ঘটনার জেরে রাগের বশবর্তী হয়ে বিপ্লব ও তার চাচা আমার ওপর হামলা করেছেন। সাদ্দাম আরও বলেন, শুধু তাই নয়, মারধরের পর তারা লোকজন নিয়ে আমার বাড়ি ঘরে ইটপাটকেল মেরেছে। তাদের বিরুদ্ধে সঠিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। মারধরের বিষয়ে বিপ্লব হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক না। আমি বা আমার চাচা সাদ্দামের ওপর কোনো আঘাত করিনি। তবে পূর্বের একটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে আমি তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে কিছু বাজে মন্তব্য করেছিলাম। পরে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম। এদিকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরোজ হোসেনের বিষয়ে জানতে জরুরি বিভাগের মোবাইল নম্বরে কল দিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, রাতে বিরক্ত করার জন্য ফোন দিয়েছেন কেন। রাতে ফোন দিতে বলছে কে। এরপরই তিনি কিছু না বলে লাইন কেটে দেন। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, সাদ্দাম হোসেনের ঠোঁটের বাম পাশে কেটে গেছে। সেখানে তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত। এদিকে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম রায়হান ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। সঙ্গে সাদ্দাম হোসেনের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেন। তবে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিপ্লবের সঙ্গে সাদ্দামের দ্বন্দ্ব ছিল। রাতে বিপ্লব হোসেন তার নিজের ওষুধের দোকানে মোবাইলে কথা বলছিলেন। সাদ্দাম গিয়ে বলেন তুই গালি দিলি কেন। তখন বিপ্লব বলে কই গালি দিলাম। সাদ্দাম দোকানের সাইনবোর্ড বিপ্লবের দিকে ছুড়ে মারেন। পরে সাদ্দাম ভেতরে ঢুকতে গেলে বিপ্লব ধাক্কা মারেন। এ সময় দুজনই ধস্তাধস্তি শুরু করেন। স্থানীয়রা তাদের শান্ত করেন। ওসি আরও বলেন, ঘটনার ১৫-২০ মিনিট পর সাদ্দামের চাচা ও লোকজন লাঠি নিয়ে বিপ্লবকে মারতে আসেন। তখন স্থানীয়দের কথায় বিপ্লব দোকান বন্ধ করে চলে যান। পাশেই মুদির দোকান থেকে বিপ্লবের চাচাকে বেদম মারধর করেন তারা। আহত হয়ে ফিরোজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সাদ্দাম আশঙ্কা করতে পারে এর জেরে তার বাড়ির ওপর হামলা হতে পারে। এজন্য আগেই তিনি প্রচার করছেন তার বাড়িতে ওরা হামলা করেছে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পরে মনে হয় সাদ্দাম হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে।
Leave a Reply