1. admin@agamirdorpon.com : admin :
  2. agamirdarpon@gmail.com : News admin :
  3. razzakmaheshpur@gmail.com : razzakmaheshpur :
নওগাঁয় কারাম উৎসব।
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ন

নওগাঁয় কারাম উৎসব।

  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৮ Time View

রিজওয়ান নওগাঁ। কারামপূজা একটি মহাউৎসব যা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায় বিশেষ গুরুত্ব সহকারে মেনে চলে এবং পালন করে। গত সোমবার ছিল তাদের সেই মহোৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণের মুহূর্তানলী। সমস্ত দিনভর তারা সাজুগুজু করে আলতারাঙ্গা পায়ে নতুন বস্ত্র পরিধান করে ঢোল আর মাদলের তালে তালে রুনুঝুনু নাচ-গান বা শ্রীং- এর মূর্ছনায় সময় অতি বাহিত করে। আমের রাজধানী হিসেবে প্রসিদ্ধ সীমান্ত ঘেঁসা নওগাঁ জেলার আদিবাসীদের ৩০ তম ঐতিহ্য বাহী কারাম উৎসবে আশপাশের জেলা থেকে আগত ২৫ টি দল যোগ দিয়ে নিজেদের ভাষা,সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্য তুলে ধরে পরে সভা ওআলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।  সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার। উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডী। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি আমিন কুজুরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান। এ সময় জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজাদুল ইসলাম, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইএসসির সভাপতি ডি এম আব্দুল বারী ও নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসনাতসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। কারাম উৎসবকে আবার ডাল পূজাও বলা হয়ে থাকে। আদিবাসী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে কারাম একটি পবিত্র গাছের নাম। এই গাছকে মঙ্গলের প্রতীক বলা হয়ে থাকে। কারাম ডাল মাটিতে পুঁতে বিভিন্ন আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে এই পূজা করা হয়। আর এ দিনটির জন্য অধির আগ্রহে থাকেন তারা। ওই উৎসবে শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সী নর-নারী গ্রামের পূজাস্থানে জড়ো হন। সেখানে পুরোহিত নতুন প্রজন্মের কাছে কিচ্ছা আকারে কার্মা ও ধার্মা দুই ভাইয়ের কাহিনি তুলে ধরেন। কিচ্ছা বলা শেষ হলে হলে উপোস থাকা নারীরা পরস্পরকে খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভাঙেন। পরে বেদিতে পুঁতে রাখা কারাম ডালের চারপাশ ঘুরে ঘুরে ঢাক ঢোল ও মাদলের বাজনার তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করেন নারীরা। পূজা পর্ব শেষে সবাই মিলে গীত গাইতে গাইতে কারাম ডালকে পুকুরে বিসর্জন দেন। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রধান উৎসব কারাম। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় এ উৎসবের আয়োজন করে তারা। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে কারাম বৃক্ষের ডাল নিয়ে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তাদের বিশ্বাস, এটি অভাবমুক্তি ও সৌভাগ্য লাভের উৎসব।  ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে মনের কামনা-বাসনা পূরণের লক্ষ্যে প্রার্থনা করে থাকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ। এছাড়া নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এ পূজাকে ঘিরে নওগাঁসহ সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। উপজেলার নাটশাল মাঠে নওগাঁসহ পাশবর্তী জয়পুরহাট ও নাটোর জেলা থেকে মোট ২৫টি দল উৎসবে অংশ নেয়। এ সময় পুরো এলাকা আদিবাসীদের সকল সম্প্রদায় মানুষের হয়ে উঠে মিলন মেলা। জেলার পত্নীতলা থেকে আসা অঞ্জলী খানকো বলেন, কারাম আমাদের জাতীয় উৎসব। এ পূজার মাধ্যমে সংসারের উন্নতি, স্বামী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো ঈশ্বরের কাছে এই চাওয়া। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লাকী তিরকি মুণ্ডা জানায়, ঈশ্বরের কাছে চাওয়া পড়াশুনায় ভালো করাসহ যেন জীবনে উন্নতি করতে পারি। এছাড়া বাবা-মা’র সেবা করাসহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি। এ উৎসবে দল বেঁধে নাচতে পেরে অনেক খুশি। জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি আমিন কুজুর বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয়ভাবে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে। দলবদ্ধ ছন্দময় নাচের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি তুলে ধরে।  জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজাদুল ইসলাম বলেন, আদিবাসীরা হচ্ছে প্রকৃতির পূজারি। তারা মনে করে প্রকৃতি তাদের ভালো রাখতে পারবে। এ লক্ষ্যে তারা কারাম পূজা করে থাকে। এ পূজা পরিবার, সমাজ ও দেশের মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে বলে মনে করা হয়।প্রতি বৎসর এই কারাম পূজার মাধ্যমে প্রমানিত হয় যে,আমাদের দেশ একটি সকল জাতির মেল বন্ধনের দেশ। উল্লেখ্য যে, পত্নী তলা ও ধামুইরহাটের কারাম উৎসবে সকল জাতির হাজারো দর্শক এই উৎসব কে অধিকতর সাফল্য মন্ডিত করে তোলে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
  • © All rights reserved © 2019 agamirdorpon.com
Design & Developed By BD IT HOST