আগামীর দর্পণ
দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিবে। ফলেএখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। খাদ্য পণ্যের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। সরকার এই বিষয়টি অনুধাবন করে কৃষি পণ্য ও খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। এই কৃষি ও খাদ্য শস্যের নতুন জাত উদ্ভাবন ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণার ভূমিকা অপরিসীম।
এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি হবে যা কৃষি বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখবে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যেকোনো স্থানের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা সহজেই আসতে পারবেন। এখানকার নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ শিক্ষা ও গবেষণা কাজের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।ফলে ভৌগলিক অবস্থানগত বিবেচনায় এটি একটি উপযুক্ত স্থান। এখানে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা দেখা দিলে পার্শ্ববর্তী বৈঁচিতলা, জলিলপুর-নস্তি সড়কের পাশের মাঠ কিংবা মহেশপুর-নাটিমা সড়কের পাশে স্থান নির্বাচন করা যায়।
যেখান থেকে সহজেই দত্তনগর খামারে যাওয়া যাবে। কৃষি সংক্রান্ত পাঠদান ওগবেষণার পাশাপাশি এখানে আধুনিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়াদি পড়ানো যেতে পারে। এছাড়াও জলবায়ু বিজ্ঞান,মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্ম চর্চা, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন,প্রকৌশল ও মেডিকেল সাইন্স বিষয়ে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও গবেষণাগার থাকতে
পারে। এক কথায় একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয় যাকে বলে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে।দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা বিশ্বের সঙ্গে চলতে হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি, বিষয় ও গবেষণাতে নতুনত্ব আনতে হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হতে হবে আধুনিক। একটি আধুনিক স্মার্ট রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষা, গবেষণার সঙ্গে সংস্কৃতিও মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মহেশপুরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হোক যা হবে সারা দেশের রোল মডেল। এইবিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ মহেশপুরের কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে করা উচিত বলে মনে করি। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ চাই? বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সরকার জাতির সাত শ্রেষ্ঠ
সন্তানকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে যার মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর
রহমান একজন। ১৯৫৩ সালে তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর মার্চে স্বাধীনতা
যুদ্ধ শুরু হলে হামিদুর রহমান বাংলাদেশেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাত
থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যুদ্ধে যোগ দেন। অক্টোবর মাসে তিনি সিলেটের
শ্রীমঙ্গল এলাকার ধলই সীমান্তে শহীদ হন। হামিদুর রহমান মহেশপুর তথা সারা
বাংলাদেশের গর্ব। তাঁর নামে নিজ গ্রামের নাম করণ করা হয়েছে। এছাড়াও তাঁর
নামে গ্রামে একটি সরকারি কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ মাঠে নির্মাণ
করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও
গ্রন্থাগার, ঝিনাইদহ জেলা শহরের স্টেডিয়াম, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের
অডিটোরিয়াম ও মহেশপুরে একটি সড়ক রয়েছে। বাংলাদেশে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ
থাকলেও কারো নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মহেশপুরের সন্তান আবার এই মহেশপুর উপজেলাতেই
রয়েছে বৃহত্তম কৃষি খামার। যেখানকার ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য উপযুক্ত। ফলে সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের
শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনকরে অনন্য নজির স্থাপন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এর মাধ্যমে কৃষি,বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার পথ যেমন সুগম হবে তেমনই এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হবে।
Leave a Reply