আজিজুর রহমান,কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি: কেশবপুরে আবারও অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে অচেতন হওয়া একই পরিবারের ৪ ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লুটে নেওয়া হয়েছে ওই পরিবারের মালামাল। গত রোববার রাতে উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়ির অনতিদূরেই এ ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালে খবর পেয়ে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত আগস্ট মাসে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৬টি পরিবার হয়েছে নিঃস্ব। এ সব পরিবারের অন্তত ১২ জন অচেতন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সন্ধ্যা নামলেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে কেশবপুরের মানুষ। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চিংড়া গ্রামের মুদি ও কাপড় ব্যবসায়ী গুরুপদ দে’র (৮৫) বাড়ির সদস্যরা রোববার রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সোমবার সকালে ওই পরিবারের সদস্যদের সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশিরা তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখেন ক্রপসিক্যাল গেটের (কেচি গেট) তালা ভাঙা। পরিবারের গৃহকর্তা গুরুপদ দে, তার স্ত্রী ননি বালা দে, ছেলে বিমল দে (৫৭) ও বিধান দে (৪৮) অচেতন অবস্থায় ঘরের ভেতর রয়েছেন। ঘরের মধ্যে আলমারি, লোহার সিন্দুক ভেঙ্গে মালামাল লুট করা হয়েছে। খবর পেয়ে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, গুরুপদ দে চিংড়া বাজারের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ওই বাড়ি থেকে একটি নতুন মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকরসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। অচেতন হওয়া ব্যক্তিদের জ্ঞান ফিরলে সঠিক ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। ঘটনাস্থলটি চিংড়া পুলিশ ফাঁড়ির অনতিদূরেই। চিংড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদের বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিবারের সকলেই অচেতন থাকায় ওই বাড়ি থেকে কি কি মালামাল খোয়া গেছে তা জানা সম্ভব হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আহসানুল মিজান রুমি বলেন, অচেতন অবস্থায় ৪ ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বৃদ্ধ গুরুপদ দে’র অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান বলেন, চিংড়া গ্রামের ওই ব্যক্তিদের জ্ঞান ফেরার পর থানায় অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেশবপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুমার মল্লিক বলেন, একের পর এক এভাবে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মানুষ সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই কেশবপুরবাসী অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। চেতনানাশকে অচেতন হওয়া ব্যক্তিদের জীবনও পড়ছে সংকটে। উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট রাতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কৌশলে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে উপজেলার সুজাপুর গ্রামের এইচ এম রাসেল (৪৩), একই রাতে পাশের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের নিখিল সেন (৪৫), ১৬ আগস্ট রাতে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুমার মল্লিকের বাবা ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের সরাপপুর গ্রামের আনন্দ মোহন মল্লিক (৬০), ১৩ আগস্ট রাতে উপজেলার বেতিখোলা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী বিমল রায়, ৮ আগস্ট কোমরপুর গ্রামের আশরাফ আলী ও ১ আগস্ট উপজেলার ভেরচি গ্রামের হরিপদ আইচ (৭৫) এর বাড়ি অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা হানা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের অচেতন করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়। এ সব ঘটনায় থানায় ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত ২২ আগস্ট অজ্ঞান পার্টির সদস্য সন্দেহে ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।
Leave a Reply