হৃদয় এস এম শাহ্-আলম নিজস্ব প্রতিনিধি: ছেলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ডেক্স-বক্সে গান বাজানোর অপরাধে হবিগঞ্জের মাধবপুরে লাল বানু নামে এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।সমাজচ্যুতির কারণে ওই নারীর সঙ্গে গ্রামের সবাই কথা বলা বন্ধ রেখেছেন।করছেন না স্বাভাবিক মেলামেশাও বাড়ি থেকে বের হলেই লোকজন তাঁকে নানাভাবে হেনস্থা করছে বলে অভিযোগ করেছেন লাল বানু। ফলে চার সন্তান পরিবার নিয়ে তিনি ভীষণ সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় রীতিমত টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগী লাল বানু জানান, কিছু দিন আগে তাঁর ছেলে নূরুল হকের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ছোট সাউন্ডবক্সে বিয়ের গীত বাজছিল। সে সময় গ্রামের প্রভাবশালীরা এসে তাদের গান বন্ধ করতে বলেন। নিষেধ শুনে তারা গান বাজানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গত ১৩ অক্টোবর বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য লাল বানু স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা জাকির হোসেনকে দাওয়াত দিলে তিনি আসেননি। কারণ জানতে চাইলে জানানো হয়, লাল বানুকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। ওই মসজিদের ইমাম মাওলানা জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,ওই মহিলাকে ওই অর্থে একঘরে করা হয় নি।ছেলের বিয়েতে গান বাজনা করায় তাকে মসজিদ কমিটির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হইলেও সে ক্ষমা চাই নি। এ ব্যাপারে সাতপাড়া গ্রামের মাতব্বর রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই গ্রামের রীতি হচ্ছে বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো যাবে না। কারণ, ইসলাম ধর্মে গান-বাজনা নিষেধ। এছাড়া মাইকের উচ্চ শব্দের কারণে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়। লাল বানু সমাজের কথা না মেনে উচ্চ শব্দে বিয়েবাড়িতে সাউন্ডবক্স বাজানোর কারণে তাঁর বাড়িতে মসজিদের ইমামকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। লাল বানু সমাজের কাছে ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা হবে। লাল বানু ক্ষমা চাইতে রাজি নন। এ কারণে তাঁকে আপাতত সমাজচ্যুত করা হয়েছে। ওই এলাকার ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী জানান,সমাজচ্যুত করা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমি ওই এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার গ্রাম মাতুব্বর রফিক তার বড় ভাই আসাদুল ইসলাম ও মসজিদের ইমাম মাওলানা জাকির যে কাজটি ওই মহিলার সাথে করেছে সেটা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। চৌমুহনী ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার সাতপাড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের বলে এসেছি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য।’ মাধবপুরের ইউএনও মনজুর আহসান বলেন, সমাজচ্যুত করার ঘটনার বিষয়টি শুনে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে তাদের আদালতে যাওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply