মোঃশাহাব উদ্দিন আহমেদ কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি ঃ সরকারের কৃষি মন্ত্রীর নিজ বসতবাড়ীর এলাকা মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র আবাদি জমির উর্বর মাটি কাটার হিড়িক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন কৃষিজমির রকম পরিবর্তন করা যাবে না- মর্মে মাইকিং করে ব্যাপক প্রচারনার পর থেকে বিভিন্ন এলাকার দু’ফসলি, তিন ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নেয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এসকেবেটর লাগিয়ে অবাধে কৃষিজমি খনন করে মাটি উত্তোলন করে ট্রাকযোগে ইটভাটা ও বসতভিটার জমি ভরাট করা হচ্ছে। এমনকি রাতের আধাঁরে ও গাপ্পা মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস, অর্থনৈতিক প্রভাব ও পরিবেশেরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তুু মাটি কাটা প্রতিরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ। প্রতিরোধে কার্যতঃ এক প্রকার নিরব ভূমিকা পালন করছে। সরেজমিনে দেখা যায়,কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন,শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার, আলীনগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রকাশ্যে কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে ট্রাক ও ট্রাক্টরযোগে স্থানান্তর করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে জমির উর্বর মাটি কাটা হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। কমলগঞ্জ পৌর এলাকার খুশালপুর,নারায়নপুর এলাকায় কোদাল দিয়ে এছাড়া মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রামপুর এলাকা, সদর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও,রাসটিলা,সরইবাড়ী, পতনঊষারের উসমানগড়, পালপুর, শ্রীসূর্য্যসহ বিভিন্ন এলাকায় এসকেবেটার লাগিয়ে নির্বিঘেœ জমির উর্বর মাটি কাটা হচ্ছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনকে বার বার অবহিত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এতে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার পোয়াবারো বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। কমলগঞ্জের সাহাব উদ্দীন, মুন্সীবাজারের মোহাম্মদ শাহজাহান, পতনঊষারের সফিক মিয়াসহ স্থানীয়রা জানান, ইটভাটা, বসতবাড়ি নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরী ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করার দু’চারদিন পর থেকেই মাটি কাটার হিড়িক শুরু হয়েছে। এসব বিষয়ে ইউএনও এবং এসিল্যা- কে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী ও লেখক নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, কৃষিজমির উপরের ৬ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি উর্বর ও ফসল উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মাটি চলে যাওয়ায় জমির উর্বরতা হারিয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর। তাছাড়া কৃষিজমির শ্রেনী পরিবর্তন না করার কথা থাকলেও অব্যাহতহারে আবাদি কৃষিজমি ভরাট ও গর্ত করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। তিনি আরো বলেন, কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে আবাদি জমি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দ্রুতহারে এভাবে কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ইউএনও এবং এসিল্যা- সাহেবকে কয়েক দফা ফোনে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দিলেও তারা দেখছেন বলেই শেষ। স্থানীয় কৃষিজমির মালিকদের কেউ কেউ অর্থাভাবে স্বল্পমূল্যে মাটি বিক্রি করছেন। ইটভাটা মালিকরা মাটি কিনে স্ব স্ব ভাটায় ট্রাক ও ট্রাক্টর যোগে পরিবহন করছেন। তাছাড়া বাসাবাড়ির ভিটা ভরাটের জন্যও কেউ কেউ মাটি কেটে নিচ্ছেন। উপজেলার ১৪টি ইটভাটায় প্রতিনিয়িত বিভিন্ন কৃষিজমি থেকে মাটি সংগ্রহ করছে। কৃষিজমির দুই থেকে তিন ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সেখানকার জমিতে তৈরী হয়েছে গর্ত। আগামী দিনগুলোতে এসব জমিতে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মোবাশ্বির আলী, ফজলু মিয়া, আক্তার মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, শুকনো মৌসুমে এসব জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করায় দুই ফুট পরিমাণ খুড়ে কেটে নেয়া হয়। এতে দীর্ঘদিনে জমিতে তৈরি হওয়া মাটির উর্বরাশক্তি কমে যায়। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী মালিকের জমি থেকে বৃষ্টির সময়ে উর্বর মাটি নিচু জমিতে চলে যাওয়ায় অন্যের জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রিজুয়ান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, যেসব এলাকায় এভাবে কৃষিজমির উর্বর মাটি কাটা হচ্ছে সেসব এলাকার ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে দিলে আমাদের অভিযান করতে সুবিধা হবে।
Leave a Reply