মোঃ পাপুল সরকার,গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের জাহিদুল মিয়ার ছেলে জিসান মিয়া (১৩) নামের এক স্কুল শিক্ষার্থীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও আজও কোনো কুলু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দিন নিহতের পরিবারের মোবাইল ফোনে কল করে জিসানকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার সূত্র ধরে একই এলাকার রেজওয়ান ইসলাম (১৬) ও নাহিদ মিয়া (১৭) নামের দুই যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। পরদিন মামলা হলে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদেরকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর এ মামলায় আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মানিক রানার কাছে ঘটনার রহস্য, কারা জড়িত এবং দেড় মাস পেরিয়ে যাচ্ছে ঘটনার বিষয়ে তদন্তের অগ্রগতিই বা কী? জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য “অভিযুক্তরা কিছুই বলছেনা। এরা যে (আসামিরা) কি খেয়েছে”! তদন্তকারী কর্মকর্তার এমন বক্তব্য সন্তোষজনক নয়। পুলিশের এমন আচরণে সুবিচারের অনিশ্চয়তা এবং মামলার তদন্তককারী পুলিশ কর্মকর্তার কথা বার্তায় প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারটি। সোমবার (৮ মে) দুপুরে শহরের ১নং রেল গেটের বন্ধু সংসদে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন মামলার বাদী নিহতের চাচা মতিয়ার রহমান ও তার পরিবার। এসময় নিহতের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও মা হাজেরা বেগমসহ তার স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, ১৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে নিহত জিসানের বন্ধু ও সহপাঠী ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রেজওয়ান ও আজাদ আকন্দের ছেলে নাহিদের মোবাইল ফোন পেয়ে জিসান বাড়ি থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। পরিবারের সদস্যরা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরদিন গাইবান্ধা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপর পরদিন (১৮ মার্চ) বিকেলে স্থানীয়দের খবরে সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাপুর গ্রাম থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আরো বলা হয়, নবম শ্রেণির একটি ছোট্ট শিশুকে গলটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হলো। আমরা শিশুটির রক্তাক্ত মরদেহ পেলাম। ঘটনার প্রায় দুইমাস হচ্ছে আজও কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারলোনা পুলিশ। ওই দিনে গ্রেপ্তার দুইজন ছাড়া আর কোনো আসামীকে সনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি। এছাড়া সংবাদ সম্মলনে অভিযোগ করে বলা হয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কথ বার্তায় প্রমাণ করে ঘটনায় জড়িত প্রভাবশালীদের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন। হত্যার ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদ কর্মীদের মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণও করা হয়। একই সাথে জিসান হত্যার পরিকল্পনাকারীসহ জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করে তাদেরকে তাদের ফাঁসির দাবিও করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্যানারে থাকা ছেলে জিসানের রক্তাক্ত ছবি ধরে কাঁদতে থাকা মা হাজেরা বেগম। কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে বন্ধু সংসদ। এসময় আবেগে আপ্লুত হয় তার বাবাসহ অন্যান্য স্বজনরাও। এরআগে গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় নিখোঁজের একদিন পর স্থানীয়দের খবরে সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাপুর গ্রাম থেকে জিসানের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে সদর থানা পুলিশ। এঘটনায় পরদিন নিহতের চাচা মতিয়ার রহমান বাদি একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রেজওয়ান ও আজাদ আকন্দের ছেলে নাহিদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উল্লেখ্য: এরআগে গত ২২ মার্চ সকালে জিসানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে সদরের তুলশীঘাটে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল পালন করে সহপাঠী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী। প্রায় দুইঘন্টা ব্যাপি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে প্রায় ২০ হাজার আন্দোলনকারী অংশ নেয়। এতে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যা গাইবান্ধার ইতিহাসে সব থেকে বড় মানববন্ধন ও বিক্ষোভের একটি।
Leave a Reply