আজ ২১ জুন, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। এ দিবস উপলক্ষে বুধবার রাতে শেরপুরের নকলা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় প্রেস ক্লাব অফিসে ক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা করা হয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- সিনিয়র সাংবাদিক প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য মাহবুবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সরকার বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, ক্রীড়া সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুক প্রমুখ।
বক্তারা জানান, ১৯৯২ সালের এই দিনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে বিনা উসকানিতে পুলিশ ও তৎকালীন সরকারের পেটুয়া বাহিনী জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢুকে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও নির্যাতন চালায়। এতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ১০ জন গুরুতর আহতসহ অর্ধ শতাধিক সাংবাদিক আহত হয়। মাঝখানের সময়টাতে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও নির্যাতনের পরিমাণ কম হলেও, অজ্ঞাত কারনে এখন আবার সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য শুভ সংকেত নয় এবং কোন সভ্য দেশের মানুষের কাজ নয়। এমনটা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কেউ আশা করেন না।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন বৃদ্ধির কারন গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারন হিসেবে বিগত দিনে দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়াকে দায়ী করছেন বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিক সমাজ।
তারা জানান- ১৯৯২ সালের ২১ জুনে ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক ঘটনাটির তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও, তা আলোর মুখ দেখিনি। তাই প্রতিবছর ২১ জুন সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
বক্তারা বলেন, দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড সমূহ জাতির সামনে তুলে ধরতে প্রতিটি সাংবাদিক নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার-প্রকাশ করাসহ সমাজের অসঙ্গতি সমূহ জাতির সামনে তুলে ধরাই সাংবাদিকদের কাজ। তাতে হয়তোবা কোন কুচক্রী মহলের স্বার্থে আঘাত আসে বা খবরটা তাদের প্রতিকূলে চলেযায়। ফলে কুচক্রী বা স্বার্থান্বেষী মহল সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, হয়রানি ও নির্যাতন চালায়। কিন্তু সাংবাদিকদের কলম চলবে সত্যের পক্ষে, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ কোন লেখকের কলম থেমে থাকতে পারে না, থেমে থাকবে না।
সাংবাদিকদের প্রতিবাদী কণ্ঠ ও সত্যের পক্ষের কলমকে কোনক্রমেই থামিয়ে রাখা যাবেনা বলেও তারা মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে গণতন্ত্র সুসংহত করা যায় না। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবী জানান তারা।
তারা বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যেকোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমেই দেশের সুনাম ও সার্বিক চিত্র দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে বলে বক্তারা জানান। তাছাড়া, সম্প্রতি নকলা প্রেস ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুকুজ্জামান ফারুকের ওপর হামলা ও জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে হত্যাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাংবাকিদের ওপর নির্যাতনের সুষ্ঠ বিচার কামনা করেন তারা।
এসময় প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বী রাজন দপ্তর সম্পাদক মো. সেলিম রেজা, প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম রিজন, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল-আমিন, তথ্য-গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সৌরভ, সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন শ্যামল, রেজাউল হাসান সাফিত ও শীমানুর রহমান সুখনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply