বদরুল আমীন, ময়মনসিংহ ঃ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে গতিশীলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে ক্রমেই গতি পেয়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে মাদকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। মাদক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ প্রদান করে আসছেন। এই নির্দেশনা সঠিক বাস্তবায়ন খুবই জরুরী। মাদকের নেশায় তরুণ প্রজন্মের অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের ছোবলে তরুণ যুবসমাজ যেভাবে অপরাধের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। মূলত মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতে গিয়েই কিশোর-তরুণরা ব্যাপকভাবে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সর্বনাশা মাদকের কারণে যুবসমাজ মেধাশূন্য হচ্ছে। তাই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল ছোবল হতে রক্ষা একমাত্র পথ মাদক নির্মূল। সেজন্য মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন জরুরী। ময়মনসিংহ নগরীতে মাদক জোন হিসাবে খ্যাত কেওয়াটখালী, পাটগুদাম ব্রিজের কাশেম আলী কলেজের পিছে, রমেশ সেন রোডে নিষিদ্ধপল্লী, পুরোহিত পাড়া, কৃষ্টপুর, বাঘমারা, রহমতপুর, ব্রাহ্মপল্লী, সানকিপাড়া, ময়নার মোড়, কালীবাড়ী চর, চামড়া গুদাম, মালগুদাম, ছয়ত্রিশ বাড়ি কলোনী, কাঠগোলা ও ডেঙ্গু ব্যাপারী রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে। নগরীর এইসব এলাকায় মাদক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই সব এলাকায় হাত বাড়ালেই পেয়ে যাচ্ছে মাদক।অনেক মাদক ব্যবসায়ীর শেলটারে রয়েছে কতিপয় পুলিশ অফিসারও। তাদের সোর্সেরা এশহরের চিহ্নীত মোটর সাইকেল চোর ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। অনেক মাদক ব্যবসায়ী বীরদর্পে বলে “আমি পুলিশের মাল বিক্রী করি”! জনশ্রুতি রয়েছে, ময়মনসিংহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের “ক” সার্কেলের ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসান এর মদদে দেশীয় মদের ডিলারের কর্মচারী কর্তৃক নিষিদ্ধপল্লীর ভিতরে ২৭ জন কালোবাজারী হকারদের হাতে প্রতিদিন পৌঁছে যাচ্ছে পারমিটবিহীন পানি মিশানো শত শত লিটার দেশীয় বাংলা মদ। এছাড়া জেলার আশ-পাশের থানা থেকেও শত শত লিটার চুলাই মদ ঢুকছে নিষিদ্ধপল্লীর ভিতর। এখানের কালোবাজারের হকারদের কাছে প্রতিদিন ৫’শ থেকে ৬’শ লিটার মদ মজুদ থাকে। তারপর অবৈধ মদ নিষিদ্ধপল্লীর ভিতর বিক্রি হয় ও নগরে হোম সার্ভিস দেয়া হয়। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিপুল পরিমানে অবৈধ মদ মজুদ করার তথ্য পাওয়া গেছে। এই অবৈধ মদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে সর্দাণী লাভলী। সর্দাণী লাভলী পুলিশের নামে জনপ্রতি হকারদের কাছ থেকে ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা চাঁদা তোলে। এই চাঁদার ভাগ ময়মনসিংহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের “ক” সার্কেলের ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসানসহ চলে যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সাংবাদিকদের কাছে। তথ্য সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের “ক” সার্কেলের ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসান যোগদান করার পর থেকেই ময়মনসিংহ সদর ও নগর এলাকায় মরন নেশা ইয়াবা, হেরোইন, চুলাই মদ ও দেশীয় মদে সয়লাভ হয়ে গেছে। পুলিশী অভিযানে মাদক উদ্ধার ও ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলেও কবিরুল হাসানের সাথে মাসোহারার তথ্য উঠে আসে। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, নগরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কেওয়াটখালীর হামে, রফিক, সোহেলদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। পোড়হিত পাড়ার নুরেছা, হারুন হেরোইন বিক্রী করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান নেই। ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসানের সাথে এইসব এলাকার সকল মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা রয়েছে। রহমতপুরে রাহেলা ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবসা করে তার সাথেও রয়েছে ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসান এর সখ্যতা। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি মাদক স্পটের ব্যবসায়ীদের সাথে ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসান এর সখ্যতা থাকায় সদরে ও নগরে মাদকের প্রভাব কিছুতেই কমছে না। ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসান নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকায় তার মদদে দেশীয় মদ কালোবাজারে সরবরাহ করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। সদর ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসান জানান, পারমিটবিহীন এক ফোটা মদ না দেয়ার জন্য ডিলারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিদিন পারমিটবিহীন পানি মিশানো দেশীয় মদ যৌনকর্মীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ও কালোবাজারী হকারা অবৈধ পন্থায় ডিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের একাধিক সূত্র জানায়, সদর ইন্সপেক্টর বড়কর্তাদের তোষামোদে পটু। অভিযানিক কাজ খুব কমই করেন। এছাড়া নগরের চিহ্নিত অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার পরিচিতি বিদ্যমান। বিভিন্ন সোর্সের তথ্যদানের পরও সে অভিযানে আগ্রহ দেখান না। নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যান। মাদকের সাবেক এডি বাবুল সাহেব ইতিপূর্বে নিষিদ্ধপল্লীতে বিভিন্ন হকারদের ঘরে অভিযান চালাতে চাইলে তিনি বাঁধাগ্রস্থ করেন। পরে অভিযানিক টিমকে ফিরে যেতে হয়। দেশীয় মদের ডিলার প্রতিমাসে প্রতি পারমিটধারীর জন্য মাসে ৯ লিটার মদ বরাদ্দ রাখলেও অনেক পানমিটধারী মদ উত্তোলন করেন না। সূত্রমতে ৭শ’র উপরে পারমিটধারী রয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই বিপুল পরিমান মদ চালান দিয়ে উত্তোলন করেন সদর ডিলার। অভিযোগ রয়েছে, বেশীর ভাগ দেশীয় মদ চলে যায় নিষিদ্ধপল্লীর কালোবাজারের হকারদের কাছে। নিষিদ্ধপল্লীর ২৭ জন হকার দেশীয় মদের ডিলার এর কাছ থেকে অবৈধ পন্থায় টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে। এটা দিনের আলোতে সংগ্রহ হয় বলে পুলিশসহ সবাই জানে। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করা হয়। মাদকসেবীদের মদ্য সেবনে রাতের নগর থাকে উত্তপ্ত। কারন হকাররা দুপুর থেকে মদ বিক্রী শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রী করে থাকে। মাদকসেবীর উত্তপ্ত আওয়াজ ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল এর ভিডিও দৈনিক উর্মিবাংলা প্রতিদিনের কাছে রয়েছে। যা পরের সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে। ফলে রাতে নগরীতে অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেকে মদ সেবন করে নানা ধরনের অপরাধ সংঘঠিত করে থাকে। “ক” অঞ্চলের নগর কিংবা গ্রামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান খুব কমই হয়। শম্ভুগজ্ঞ ঋষিপাড়ায় চুলাই মদ বিক্রী হচ্ছে হরদম। নিষিদ্ধপল্লীতে গভীর রাত পর্যন্ত কালোবাজারে হকারা অবৈধ মদ বিক্রী করে থাকে। সদর ইন্সপেক্টর কবিরুল হাসানের মাদক নিয়ন্ত্রণে অনিহা থাকলেও নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহ সদরে, নগরে থানা পুলিশ ও ফাঁড়ি পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদকসহ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করছে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে থানা পুলিশ ও ১নং ফাঁড়ির আইসি যোগদানের পর ফাঁড়ির পুলিশ নিষিদ্ধপল্লীতে শত শত লিটার অবৈধ মদ থাকার পরেও অভিযান করছে না। অবৈধ মদ উদ্ধারে অভিযানের বিষয়ে আইসি দেবাশীষ এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি জানান বার-বার অভিযানের তথ্যটি অবৈধ মাদক ব্যবসীদের কাছে চলে যাচ্ছে। তবে অচিরেই খুবই গোপনীয়তায় নিষিদ্ধপল্লীর অবৈধ মদ উদ্ধারের অভিযানটি সফল করা হবে। অভিযোগ রয়েছে, সোর্সরা সঠিক তথ্য দিলেও মূল স্থানে নাগিয়ে ভিন্ন ঘরে অভিযান চালায়। মাদক সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি। উঠতি বয়সের যুবকরা মাদক কেনার টাকা যোগার করতে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করলেও অশুভ শক্তিতে তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মাদক অভিযানে সফলতা না আসলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে নগরবাসী জানায় ।
Leave a Reply