স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহঃ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের চলাচল ময়মনসিংহ গাঙ্গীনার পাড়, ট্রাংপট্রী, দুর্গাবাড়ী অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা গুলোতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও প্রশাধনীসহ নানা প্রয়োজনে সবচেয়ে বেশি মানুষের পদচারণা থাকে সেখানে। দিন রাতের সবসময়ই গিজগিজ করে মানুষ। আর এসব এলাকায় ফুটপাতের দোকান বসায় সাধারন মানুষের চলাই দায়। গত দেড় বছর ফুটপাত মুক্ত থাকলেও সম্প্রতি আবার গিজগিজ করে দোকান বসিয়েছে। গত প্রায় দেড়মাস ধরে ময়মনসিংহ শহরের ১ নং পুলিশ ফাড়িতে যোগদান করেছেন পুলিশ পরিদর্শক ওয়াজেদ আলী। তিনি এসেই যেন আযান দিয়ে বসিয়ে দিলেন ফুটপাত। গাঙ্গীনার পাড়, ট্রাংপট্রী, দুর্গাবাড়ী ও ফাড়ির সামনে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসে প্রায় ৩ শ দোকান। ফাড়ি ইনচার্জ দম্ভোক্তি করে বলেই থাকেন, পুলিশ সুপারের অনুমতিতেই বসানো হয়েছে। দোকান প্রতি পুলিশ সুপারদের নামে ৫০ টাকা করে দিনপ্রতি চাঁদার অংকটাও বেড়ে গেছে। এখন প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন ১২০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। তার ভাষায় বড় স্যার বাদেও অন্যান্নরা নেন ট্রেনের টিকেট ও বিভিন্ন বাজার। ইনচার্জ বলেন, ফুটপাত না চললে এগুলো তার ঘর থেকে এনে দেয়া সম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার টাকার মত চাঁদাবাজী হয়, এ সকল ফুটপাত থেকে। অথচ একাধিকবার পুলিশ সুপার মাসুম আহম্মেদ সাংবাদিকদের সাথে বৈঠকে বলেছেন ফুটপাত ও যানজট মুক্ত শহর হবে ময়মনসিংহ! যে গাঙ্গীনার পাড়ে এত পথচারী অথচ সেখানে ফুটপাত ধরে হেঁটে চলাচল করার কোনো সুব্যবস্থা নেই। দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না গাঙ্গীনার পাড়, ট্রাংপট্রী, দুর্গাবাড়ী ও ফাড়ির সামনে ফুটপাতগুলো। পুরো ফুটপাতজুড়েই গিজগিজ করছে দোকান। পথচারীদের হাঁটার জায়গা দখল করে নানা রকমের বাজার সাজিয়ে রেখেছে অবৈধ দখলদার। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই সেখানে। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমে এসেছেন মূল সড়কে। যে কারণে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে তো থাকছে পথচারীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। গাঙ্গীনার পাড়, ট্রাংপট্রী, দুর্গাবাড়ী ও ফাড়ির সামনে এলাকাজুড়ে ফুটপাতে দোকানের আধিক্য অসহনীয়। ফুটপাতগুলো হকাররা দখল করে ব্যবসা করলেও এর নেপথ্যে আছে প্রভাবশালী ফাড়ি ইনচার্জ। হকাররাও তার কাছে জিম্মি। প্রতিদিনই চলছে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি। কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তাদের এ আধিপত্য। যে কারণে বারবার উচ্ছেদ করার পরও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না ফুটপাতগুলো। ফুটপাত দখল করা হকারদের কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। ফাড়ি ইনচার্জ ওয়াজেদ আলী সাদা মনের মানুষ। বড় স্যারদের ট্রেনের টিকেট, বাজার ও মাসের টাকা কোথা থেকে দেবে সে? কামিয়েতো দিতে হবে। গন মাধ্যমকর্মীরা তার অফিসে গেলে বিস্কুট, চানাচুর কিংবা চা দিয়ে আপ্যায়ন করেন। সহজ সড়ল এই মানুষটি মানুষের অসততা আর কাব্যিক কথা গলগল করে বলতে থাকেন। পুলিশ বিভাগের যে, একটা গোপনীয়তা আছে তা তিনি আমলেই নেননা! গাঙ্গীনার পাড় রাস্তার সামনের মূল সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ছোট দুই বাচ্ছা নিয়ে গফরগাও এর নাছিমা। সামনে স্বামী আজিজ ব্যাগ কাঁদে নিয়ে হাটছেন, পেছনেই অটোরিকশাচালক হর্ন বাজিয়ে বলছিলেন’ আপা একটু সাইড দিয়ে হেঁটে যান’। চালকের কথা শুনে নাসিমা বলছেন ‘কোথায় যাব? ফুটপাতে দোকান, রাস্তায় গাড়ি, বিপাকে আমাদের মতো পথচারী’। কথা হয় নছিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, পুরো গাঙ্গীনার পাড় এলাকার ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই। সবগুলো ফুটপাতে অতিরিক্ত দোকান, তার মধ্যে মানুষের হেঁটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এত ভিড় থাকে যেখানে পুরুষ মানুষই হাঁটতে পারে না আর আমরা মেয়ে মানুষ কিভাবে হাঁটব? পথচারীদের চলাচলের জন্য থাকা ফুটপাতে কেন? আপনাদের দোকান এমন প্রশ্নের জবাবে ফুটপাতের দোকানি আমিনুল ইসলাম বলেন, টাকা দিয়ে দোকান বসাইছি, আবার প্রতিদিন চাঁদাও দিতে হয়। মানুষও হাঁটুক আমাদেরও ব্যবসা হোক। ফুটপাতে দোকান না বসালে কই যামু, বাজারে দোকানঘর নেয়ার মতো তো পুঁজি নাই। তাই প্রতিদিন লাইনম্যানকে টাকা দিয়ে দোকান চালাই। টাকা আদায়ের ব্যপারে ফারুক স্যার, ওয়াজেদ স্যার এসে দাড়িয়ে থেকে টাকা তোলায়, দু’চারানা চুরি করবো এমন সুযোগ নেই। গাঙ্গীনারপাড়, ট্রাংপট্রী, দুর্গাবাড়ী ও ফাড়ির সামনে ফুটপাতে পথচারীদের চলাচলের কোনো পরিস্থিতি নেই, পুরো এলাকা হকারদের দখলে এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমরা খুবই তৎপর। যে কারণে মাঝে মধ্যেই এ এলাকায় আমরা অভিযান পরিচালনা করি। যেহেতু এগুলো স্থায়ী দোকান না সে কারণে আমাদের অভিযানের সময় তারা সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে পালায়, আবার এসে বসে। তাই সবসময় আমরা মনিটরিং করতে পারি না। তবে এ বিষয়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপে যাচ্ছি, আশা করি আগামীতে পথচারীদের চলাচলের ফুটপাত আর দখলে থাকবে না। খুব শিগগিরই আমরা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেব। পরিবেশবীদের মতে, হাঁটার নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যাই বেশি। অপর্যাপ্ত ও হাঁটার অনুপযোগী ফুটপাত এবং রাস্তা পারাপারের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীদের আগ্রহ থাকার পরও তারা হাঁটতে পারছেন না। পথচারীদের হাঁটার পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের মূল রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে।
Leave a Reply