আজিজুর রহমান, কেশবপুর (যশোর)জেলা প্রতিনিধি: সন্ধ্যা নামলেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে কেশবপুরের মানুষ। অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে চলতি মাসেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৬টি পরিবার হয়েছে নিঃস্ব। চেতনানাশকে অচেতন হয়ে এ সব পরিবারের অন্তত ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ২২ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে আটক করেছে। এলাকাবাসীকে সচেতন করতে কেশবপুর থানার পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করছেন। এলাকাবাসী জানায়, গত সোমবার (২১ আগস্ট) রাতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কৌশলে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে উপজেলার সুজাপুর গ্রামের এইচ এম রাসেল (৪৩), তার স্ত্রী রহিমা খাতুন ও মেয়ে রোদনী তাবাচ্ছুমকে (১৪) অচেতন করে ঘরে ঢুকে নগদ ৪৫ হাজার টাকা এবং ৪ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে। ওই রাতেই পাশের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের নিখিল সেন (৪৫), তার স্ত্রী পিংকি সেন (৩২) ও মেয়ে প্রান্তি সেনকে (৭) খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে অজ্ঞান করে। অসুস্থ অবস্থায় মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) তাদের ৬ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ১৬ আগস্ট (বুধবার) রাতে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুমার মল্লিকের বাবা উপজেলার সরাপপুর গ্রামের আনন্দ মোহন মল্লিক (৬০), মা ঝর্না রানী মল্লিক (৫৬) ও খালা করুনা রানীকে (৫৪) অচেতন করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা নগদ ৭ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার সম্পদ নিয়ে গেছে। অচেতন অবস্থায় পরের দিন ১৭ আগস্ট তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া গত ১৩ আগস্ট (রোববার) রাতে উপজেলার বেতিখোলা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী বিমল রায়ের বাড়ি থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ একটি বাইসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। গত ৮ আগস্ট কোমরপুর গ্রামে আশরাফ আলীর বাড়ি থেকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকরসহ ১ লাখ ২৭ হাজার টাকার সম্পদ নিয়ে যায়। এর আগে গত ১ আগস্ট উপজেলার ভেরচি গ্রামের গৌর আইচের বাবা হরিপদ আইচ (৭৫) ও মা মিনতী রানীকে (৬৬) অচেতনসহ মারপিট করে নগদ ৩ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ১০ লাখ টাকার স¤পদ নিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টি। এ সব ঘটনায় থানায় ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির সদস্য সন্দেহে কেশবপুরের সাবদিয়া এলাকার নাজির হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া অভয়নগর উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম (২২), উপজেলার ভোগতীনরেন্দ্রপুর গ্রামের জনি রহমান (২২), বিষ্ণুপুর গ্রামের সুমন হোসেন (২৫) ও মণিরামপুরের হালসা গ্রামের ইসরাইল হোসেনকে (৩৫) আটক করে। তাদের কাছ থেকে ১ ভরি স্বর্ণালংকার, ২ ভরি রুপার অলংকার ও চেতনানাশক ঔষধ মিশ্রিত হলুদের গুড়া উদ্ধার করা হয়। মালামাল উদ্ধারসহ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুমার মল্লিক বলেন, একের পর এক এভাবে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে মানুষ সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই কেশবপুরবাসী অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। চেতনানাশকে অচেতন হওয়া মানুষের জীবন পড়ছে ঝুঁকিতে। এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুর রহমান বলেন, অজ্ঞান পার্টির ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি এলাকার মানুষকে সচেতন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে পথসভা করা হচ্ছে।
Leave a Reply